পর্যটন নগরী বান্দরবনের আনাচে কানাচে সব জায়গায় জুড়ে ছড়িয়ে আছে সৌন্দর্য। পাহাড়, ঝরনা, বন, পাখি, খুম, জলপ্রপাত, আর স্বচ্ছ পানির সাঙ্গু নদী, কি নেই এখানে? আজ আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেবো এক অপার্থিব আর দেশের সুন্দরতম নদীর সাথে।
Table of Contents
খরচাদিঃ
বান্দরবন শহর থেকে অটো রিক্সাতে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে আমরা প্রথমে এসে নামি ক্যাচিংঘাটা নামক জায়গায়। এখান থেকে দামদর করে একটা নৌকা নিয়ে নিলাম ৩ ঘন্টার জন্য। ৩ ঘন্টার জন্য আমাদের নৌকা খরচ পরবে ১২০০ টাকা। সাঙ্গু নদীতে সারা দিনের জন্য নৌকা ভাড়া নিয়ে ঘুরে দেখা যায় নদী পার্শ্ববর্তী দর্শনীয় স্থানগুলো। নদীপথে এখানে ঘুরে দেখা যায় বড়ইতলি আদিবাসি পাড়া, দুই নদীর মোহনা (তারাছা), বান্দুরা ঝর্ণা, তেতুলিয়া পাড়া, সিনাইপাড়া লেক, বেতছরা বড়পল্লি ক্যাম্প ও ঘেরাও বাজার। আমাদের উদ্দেশ্য এই শান্ত স্নিগ্ধ নদীতেই ২/৩ ঘণ্টা ঘুরে বেড়ানো। সারা দিনের জন্য ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায় ১০ জনের ভ্রমণ উপযোগী নৌকা পেয়ে জাবেন ক্যাচিংঘাটা থেকেই।
সাঙ্গু নদী সম্পর্কে যা জানা প্রয়জোনঃ
স্রোতহীন এই সাঙ্গু নদীকে শান্ত আর কোমল মনে হলেও বর্ষায় এর ভিন্ন রূপ দেখা যায়। সাঙ্গু নদী বান্দরবন শহর এলাকায় এবং থানচির কাছাকাছি এলাকায় যথেষ্ট শান্ত মনে হলেও তিন্দু এবং রেমাক্রির কাছাকাছি গেলে এর ভয়ঙ্কর রূপ দেখা যায়। ভীতিকর কিছু দেখার ইচ্ছে আজ আমাদের নেই। আজ বরং আমরা শান্ত, সুন্দর, স্নিগ্ধ সাঙ্গু দেখে নিরে ফিরে যাবো।
সাঙ্গু নামটি অনেকের কাছেই একটু ভিন্ন ও একটু অচেনা মনে হলেও এই সাঙ্গু নদি-ই আমার দেখা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর নদী। সাঙ্গু নদী শঙ্খ নদ নামেও পরিচিত। শঙ্খ নামটি-ই এই নদীর প্রাচীন নাম হলেও এটি সাঙ্গু নদী নামেই বেশী পরিচিত। মূলত ব্রিটিশ শাসনামলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য শঙ্খ নামতই পরিবর্তিত হয়ে সাঙ্গু হয়। শঙ্খ মানে শামুক। সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী বসবাসরত মানুষদের ৯০ শতাংশ-ই মারমা সম্প্রদায়ের। মারমা সম্প্রদায়ের ভাষায় শঙ্খকে রিগ্রাই থিয়াং বা স্বচ্ছ পানির নদ বলা হয়। শঙ্খ নদের উৎপত্তি বান্দরবন জেলার মদক নামক পাহাড়ে। মদক বান্দরবন জেলার ৩য় সুউচ্চ পর্বত। চট্রগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই নদীটির দৈর্ঘ্য ১৭০ কিলোমিটার।
দুপাশে পাহাড়, বনানী আর মাঝখানে পাহাড়ের বুক চিরে একেবেঁকে বয়ে চলা সাঙ্গু নদী। আহা এর সুন্দর আর কি হতে পারে? সাঙ্গু নদীর আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে চলতে কখন চোঁখে পরে যাবে পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরে পরা ঝর্না, আবার কখন চোখে পরে যাবে সাঙ্গু নদীর খরস্রোতা রূপ।
শাঙ্গু নদীর পুরনো চিত্রঃ
এখানকার মানুষ, তাদের জীবন যাপন, এই সাঙ্গু নদী, স্রোত, পাখির মিষ্টি গান সবকিছু মিলিয়েই যেন এখানকার এই অপরূপ প্রকৃতি সৃষ্টি হয়েছে। এখানে আসার আগে শঙ্খ নদীকে নিয়ে কিছু লেখা পরছিলাম। ১৯৭০ এর দশকেও নাকি এখানে নদীর দুই ধাঁরে ঘন জঙ্গল ছিলো। আর এই জঙ্গলে বাঘ, ভাল্লুক, বন্য শুকর, সাম্বার হরিণ, দেশি লাল হরিণ, জংলি গয়াল, বন মোরগ, মথুরা, ময়ুর, হনুমান, উল্লুক, কয়েক প্রজাতির বানর, কয়েক ধরণের বন বেড়াল, অজগর সাপসহ প্রচুর পরিমান বন্য প্রাণীর প্রাচুর্য ছিলো। এক কথায় বলতে গেলে একটা Proper Wildlife বলতে যা বোঝায় আর কি।
অনুরোধঃ
নগরায়ন, গাছ নিধন, পর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন এর অভাব ও সচেতনতার অভাবে সাঙ্গু নদীর সৌন্দর্য অনেকটাই মলিন হওয়ার পথে। আসুন আমরা ভ্রমণ আর সৌন্দর্য উপভগের সময় আরো সচেতন হই আর আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বান্দারবান কে বিপরজয়ের হাত থেকে রক্ষা করি।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সড়ক পথেই সরাসরি চলে যাওয়া যায় বান্দরবন শহরে। ঢাকা থেকে বান্দরবন এ আসতে নন এসি বাসে ৭০০ টাকা এবং ধরণ ভেদে এসি বাসে ১২০০-১৬০০ টাকা খরচ পড়বে। বান্দরবন শহর থেকে ১০-১৫ মিনিটের দূরত্বে ক্যাচিংঘাটা। এখান থেকেই সাধারন বা ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করেই দেখতে পারবেন শঙ্খ নদীর সৌন্দর্য। আগে থেকেই নৌকার বন্দোবস্ত করে রাখতে চাইলে ক্যাচিংঘাটা টেম্পুবোট মালিক সমিতির এই নাম্বার -এ (০১৭৪০৭০৪২৭৫, ০১৬৮৭৫০৬৮৭৭, ০১৮৬৭৯৯৮৭২৭) যোগাযোগ করতে পারেন।